ময়মনসিংহে রাজনৈতিক নেতারা ব্রহ্মপুত্র নদ খননের সরকারি বালু হরিলুট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেছেন টেন্ডার ছাড়া কারও সরকারি বালু বিক্রি করার সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ পাওয়ার স্টেশন আরপিসিএল নতুন একটি প্রজেক্টের জন্য বালু দরকার। দীর্ঘদিন ধরে কোনো টেন্ডার ছাড়াই কোটি কোটি টাকার বালু আরপিসিএলসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাপ্লাই দিচ্ছেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ মণ্ডল এবং ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোরশেদুল আলম জাহাংগীর, ৩২ নং ওয়ার্ডের সিটি কাউন্সিলার আবু বকর সিদ্দিক সাগর, ৩১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলার জামাল হোসেন, যুবলীগের চৌরা সেলিম, বিএনপিকর্মী ওয়াসিম আকরাম এবং চর ইশ্বরদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগনেতা ও কাউন্সিলররা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে বিএনপিকর্মী ওয়াসিম ও বিএনপিনেতা তোফাজ্জল বর্তমানে আওয়ামী লীগনেতা ও কাউন্সিলরদের অবৈধ বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাত করছেন।
জানা গেছে, প্রতিদিন কম হলেও শত ট্রাক বালি বিক্রি হচ্ছে। এক ট্রাক বালির দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। একদিনের হিসাবে বালু বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই লাখ টাকার।
এ বিষয়ে বিএনপিনেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমি বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই।’
এ বিষয়ে ওয়াসিম আকরাম বলেন, কোনো ইজারা ছাড়াই ২০২১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবে তিনিসহ অন্যরা বালু বিক্রি করে আসছেন। বালু ব্যবসায় আওয়ামী লীগনেতা এমদাদ মণ্ডলের মালিকানাধীন মণ্ডল এন্টার প্রাইজ ৬০ শতাংশ, জামাল হোসেন ৩৫ শতাংশ এবং বাকি পাঁচ শতাংশের মালিক আকরাম এন্টার প্রাইজ (তাঁর)। এ ছাড়া বালু পরিবহণ কাজে তাঁর ট্রাক ব্যবহার করে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘দল করতে গিয়ে অনেক মামলা খাইছি। টাকা-পয়সা নষ্ট হইছে। আমি কি ব্যবসাও করতে পারব না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শিহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেন্ডার ছাড়া সরকারি বালু বিক্রির সুযোগ নেই। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এর আগে কেউ বালু বিক্রি করলে তা হবে বেআইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু নদের দুই তীরে স্তূপ করা হয়েছে। সেখান থেকেই অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাত করছে বালু ব্যবসায়ীরা।